সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বঙ্গবন্ধু রয়েছেন আমাদের নিশ্বাসে-প্রশ্বাসে

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৪:৪৩ অপরাহ্ন, ১লা আগস্ট ২০২৩

#

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

ড. আতিউর রহমান

সবার প্রিয় নেতার নাম শেখ মুজিবুর রহমান। কেউ বলতেন ‘খোকা’, কেউ ডাকতেন ‘মুজিব ভাই’। কেউ বা বলতেন ‘লিডার’। সবশেষে প্রায় সবার কাছে হয়েছিলেন ‘বঙ্গবন্ধু’। এখনো এ নামেই তিনি স্বতোৎসারিত। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে যখন বাংলাদেশ হাঁটছিল উলটো পথে, ইতিহাস থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করার ছলচাতুরী করা হচ্ছিল ব্যাপকভাবে, তখন কথাসাহিত্যিক আবুল ফজল লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ও সর্বাধিক উচ্চারিত নাম শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের ইতিহাসের তিনি শুধু নির্মাতা নন, তার প্রধান নায়কও। ... তাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস রচিত হতে পারে না।’ তার সেই ভবিষ্যদ্বাণী আজ অক্ষরে অক্ষরে সত্যি হয়েছে। আজ তিনি বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়জুড়ে অবস্থান করছেন।

তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘আমার দেখা নয়া চীন’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ পড়লেই যে কেউ বুঝতে পারেন কীভাবে একটি জাতি গঠন প্রক্রিয়ায় তিনি শত বছরের ঐতিহ্যের সম্মতিকে থিতু করেছেন বাংলাদেশ নামের এ ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের ভূখণ্ডে। ধীরে ধীরে তিনি গড়ে তুলেছেন বাঙালির মানসপট। ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে সেই মানসতটে। তার বজ্রকণ্ঠে অনুরণিত হয়েছে হাজার বছরের নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর পুঞ্জীভূত অভিমান, আবেগ ও প্রতিবাদ। তাই এ কণ্ঠের অধিকারীর সঙ্গে যোগ রাখলেই পুরো সমাজ ও পরবর্তী সময়ে বাঙালি জাতির সঙ্গে যোগ রাখা হতো।

অতীতের সব মহৎ অর্জন, বৃহৎ সাফল্য; ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, তিতুমীর, সুভাষ বোস, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, জগদীশ চন্দ্র বসু, শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানীর মতো সাহসী নেতৃত্বের নির্যাস তিনি ধারণ করেছিলেন নিজের মধ্যে। সেই সাহসী নেতৃত্বের গুণাবলি ছড়িয়ে দিয়েছেন পুরো সমাজের ভেতর। আশা করার, স্বপ্ন দেখার অধিকারের ক্ষেত্রকে তিনি বাঙালির মনে বিস্তৃত করেছেন নিরন্তর। তার সক্রিয় নেতৃত্বের বিস্তৃতি ছিল তাই সর্বব্যাপী। বরাবরই নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত তথা সব সাধারণ মানুষের মনোযোগের একেবারে কেন্দ্রে ছিলেন তিনি। ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির মূল জায়গায় ছিল বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়। 

শাসকশ্রেণি জনগণের ন্যায্য দাবি মানতে অস্বীকার করলে তিনি রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। শেষ পর্যায়ে তিনি বেছে নিয়েছেন সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পথ। বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এর আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটকে পুরোপুরি ধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই তো ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আরমানিটোলা ময়দানে এক জনসভায় বলতে পেরেছিলেন, ‘ভাষা-আন্দোলন শুধু ভাষার দাবিতে ছিল না, সেটা ছিল আমাদের জীবন-মরণের লড়াই। আমরা মানুষের মতো বাঁচতে চাই। আমরা খাদ্য চাই, বস্ত্র চাই, আশ্রয় চাই, নাগরিক অধিকার চাই।’

তদানীন্তন পাকিস্তানের দুই অংশের রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং তার ফলস্বরূপ দুই অংশের ভেতর অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রেক্ষাপটে ‘দুই অর্থনীতি’র তত্ত্বকে মুখ্য প্রশ্ন হিসাবে সামনে আনেন বঙ্গবন্ধু। কারণ তিনি জানতেন, ১৯৪৯-৫০ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় পূর্ব-বাংলা থেকে ৩২ শতাংশ বেশি ছিল। ১৯৫৯-৬০ সালে তা ৬১ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। আর এ বৈষম্যের ভিত্তিতেই গড়ে তোলেন তিনি ঐতিহাসিক ছয় দফা কর্মসূচি। উনসত্তরে ছাত্র-জনতা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে কারাগার থেকে বের করে আনেন এবং ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়। 

সমগ্র জাতির আশা-ভরসার প্রতীকে পরিণত হন তিনি। ‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন?’-এ প্রশ্নকে স্লোগান করে ১৯৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ অর্জন করে ভূমিধস বিজয়। তবুও পাকিস্তানের অভিজন শাসকরা তাদের কুক্ষিগত ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চেয়েছিল। কাজেই রাজনৈতিক সংগ্রামকে সশস্ত্রযুদ্ধে রূপান্তরের কোনো বিকল্প ছিল না তার কাছে। বঙ্গবন্ধু কারাগারে থেকেই তার আদর্শ দ্বারা মুক্তিযুদ্ধে দেশকে নেতৃত্ব দেন এবং অবশেষে কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের নেতৃত্বের ভার গ্রহণ করেন। 

শুরু করেন অসামান্য অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম। সেই সংগ্রামের মর্মবাণী হিসাবে তিনি উচ্চারণ করেন, ‘এই স্বাধীনতা তখনই আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে, যেদিন বাংলাদেশের কৃষক-মজুর ও দুঃখী মানুষের সকল দুঃখের অবসান হবে। ... আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে আরও শক্তিশালী শত্রু।

এই শত্রু হলো অভাব, দারিদ্র্য, ক্ষুধা, রোগ, অশিক্ষা, বেকারি ও দুর্নীতি। ...এই যুদ্ধে জয় সহজ নয়। অবিরাম এই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে এবং একটি সুখী, সুন্দর অভাবমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। তবেই হবে আমাদের সংগ্রাম সফল। আপনাদের শেখ মুজিবের স্বপ্ন ও সাধনার সমাপ্তি।’ তাই তো তিনি ১৯৭২ সালের ৯ মে রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানে বলে ওঠেন, ‘আমি কী চাই?/আমি চাই আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাক।/আমি কী চাই?/আমার বাংলার বেকার কাজ পাক।/আমি কী চাই?/আমার বাংলার মানুষ সুখী হোক।’

মুক্তিযুদ্ধ শেষে ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়ানো যে সংগ্রাম বঙ্গবন্ধু সূচনা করেছিলেন, তা এককথায় বলা চলে দুঃসাহসী। ১৯৭২ সালের বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, মাত্র ৬.২৯ বিলিয়ন ডলার আকারের অর্থনীতি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। শূন্য ছিল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। মাত্র ৩ শতাংশ সঞ্চয় জিডিপি অনুপাত।

মাত্র ৯ শতাংশ বিনিয়োগ-জিডিপি অনুপাত। প্রথম অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা। অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সময়োচিত নীতিগুলোর মধ্যে ছিল : ১. জাতীয়করণ, ২. চার মূলনীতিভিত্তিক সংবিধান প্রণয়ন, ৩. পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা।

উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের ধবংসস্তূপ থেকে দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে শিল্প খাতে জাতীয়করণ, সব নাগরিকের সম-অধিকার নিশ্চিতকরণের জন্য সংবিধান প্রণয়ন এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা কাঠামোর আওতায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথরেখা নির্ধারণের কাজগুলো বঙ্গবন্ধু সম্পন্ন করেছিলেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে। সুচিন্তিত পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের অভিযাত্রার এক অনন্য দলিলের নাম প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৭৩-১৯৭৮)। 

এ পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য ছিল : ১. কৃষি ও শিল্পের পুনর্গঠন ও উৎপাদন বৃদ্ধি, ২. কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য নিরসন, ৩. প্রবৃদ্ধির হার ৩ থেকে ৫.৫ শতাংশে উন্নীতকরণ, ৪. নিত্যপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ৫. বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভরতা হ্রাস (৬২ থেকে ২৭ শতাংশ), ৬. আমদানিনির্ভরতা কমাতে শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি, ৭. রপ্তানি বাড়ানো।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু তিনটি মৌলনীতি গ্রহণ করেন। এগুলোর দুটি হলো, সামাজিক সচেতনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়িয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দ্রুত কমিয়ে আনা। গবেষণা ও উন্নয়নে সমর্থন দিয়ে কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের চেষ্টা নিরন্তর চালিয়ে যাওয়া। তিনি সুদূরপ্রসারী শিল্পায়নের যে কৌশল গ্রহণ করেন, তাতে রাষ্ট্রনির্ভরতায় প্রাধান্য থাকলেও ব্যক্তি খাতের বিকাশেও উৎসাহ দেওয়া হয়। শুরুতে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে শিল্পের প্রাথমিক ভিত্তি তৈরির প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ব্যক্তি খাতের কার্যকর বিকাশের পরিবেশ সৃষ্টির প্রস্তাবনা ও পরিকল্পনাও দৃশ্যমান ছিল। 

আর তাই ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের সীমা ২৫ লাখ থেকে ৩ কোটিতে নেওয়া এবং ১৩৩টি পরিত্যক্ত কারখানা ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে সব উদ্যোগের মূলে ছিল উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টি। তাই তো বঙ্গবন্ধুকে বলতে শুনি, ‘ভাইয়েরা আমার, পরিশ্রম না করলে, কঠোর পরিশ্রম না করলে সাড়ে ৭ কোটি লোকের ৫৪ হাজার বর্গমাইল এলাকার এ দেশে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করা যাবে না। ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না। বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে এনে দেশকে গড়া যাবে না। দেশের মধ্যেই পয়সা করতে হবে। শ্রমিক ভাইদের কাছে আমার অনুরোধ, তোমাদের বারবার বলেছি, এখনো বলছি, প্রোডাকশন বাড়াও’। একই সঙ্গে তিনি বলতেন ‘সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই’।

সে কারণেই আর্থসামাজিক রূপান্তরের জন্য গুণমানের শিক্ষার অপরিহার্যতাকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ব্যাপকভিত্তিক এ পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন ছিল দক্ষ মানবসম্পদ। তাই বঙ্গবন্ধু শিক্ষার ওপর খুব জোর দিয়েছিলেন। গঠন করেছিলেন কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন। তিনি আরও জানতেন, গণমুখী জনপ্রশাসন ছাড়া অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই মাঠ প্রশাসনকে দক্ষ করে গড়ে তোলাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল।

গড়ে তুলেছিলেন জনপ্রশাসনবিষয়ক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া, ইউজিসি গঠন, কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের ক্যাডার সার্ভিসে অন্তর্ভুক্তকরণ ইত্যাদি বঙ্গবন্ধুর বাস্তবমুখী শিক্ষা ভাবনার প্রতিফলন। সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের কূটনীতি এবং বিশ্ব শান্তির পক্ষে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। 

এ কারণেই বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বলেছিলেন, ‘বাঙালি জাতি এমন এক বিশ্বব্যবস্থা গঠনে উৎসর্গীকৃত, যে ব্যবস্থায় মানুষের শান্তি ও ন্যায়বিচার লাভের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে।...অনাহার, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও বুভুক্ষার তাড়নায় জর্জরিত, পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারা সম্পূর্ণ ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কায় শিহরিত বিভীষিকাময় জগতের দিকে আমরা এগোব না, আমরা তাকাব এমন এক পৃথিবীর দিকে, যেখানে বিজ্ঞান ও কারিগরি জ্ঞানের বিস্ময়কর অগ্রগতির যুগে মানুষের সৃষ্টিক্ষমতা ও বিরাট সাফল্য আমাদের জন্য এক শঙ্কামুক্ত উন্নত ভবিষ্যৎ গঠনে সক্ষম।’ একই সঙ্গে তিনি ছিলেন বাংলাদেশের নেতা এবং বিশ্বনেতা। বঙ্গবন্ধু তাই হতে পেরেছিলেন বিশ্ববন্ধু। মূলত মানবিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত নেতৃত্বের গুণেই তিনি হতে পেরেছিলেন বিশ্বের নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সঠিক পথেই এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। মাত্র চার বছরে মাথাপিছু আয় প্রায় তিনগুণ বাড়ানো সম্ভব হয়েছিল। ১৯৭২ সালে মাত্র ৯৪ ডলার থেকে ১৯৭৫ সালে ২৭৮ ডলারে উন্নীত করা সম্ভব হয়েছিল মাথাপিছু আয়। মাথাপিছু আয়ের প্রবৃদ্ধি ঘটেছিল ১৮৩ শতাংশ। একইভাবে এ সময়ে জিডিপি ৬.৩ বিলিয়ন ডলার থেকে দাঁড়িয়েছিল ১৯.৪৫ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ জিডিপি বেড়েছিল ২০৮ শতাংশ। নেতৃত্ব যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা যায় ১৯৭৬ সালের মাথাপিছু আয় ও জিডিপির পতন দেখে। মাত্র এক বছরেই তা প্রায় অর্ধেকে (১৪১ ডলার) নেমে এসেছিল। প্রবৃদ্ধি ৯৭.১৬ শতাংশ। অনুরূপভাবে জিডিপি কমে ৪৭.৯৬ শতাংশ।

আরো পড়ুন: কারাবন্দি হয়েছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্র

উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ছিল ১৫২ ডলার। বাংলাদেশ থেকে ৬১.৭০ শতাংশ বেশি। আর সেই পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ১৯৭৫ সালে কমে দাঁড়ায় ১৬৮ ডলার। বাংলাদেশ থেকে ৩৯.৫৬ শতাংশ কম। অনুরূপভাবে ১৯৭৫ সালে পাকিস্তানের জিডিপি (১১.৩৪ বিলিয়ন ডলার) বাংলাদেশ থেকে ৪১.৬৯ শতাংশ কম। এ থেকেই বোঝা যায়, মাত্র এক বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর উদ্দীপনামূলক নেতৃত্বের গুণে কী করে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ায়। 

আর গতিময়তার এ ধারা তার আমলের পুরো সাড়ে তিন বছর ধরেই চলতে থাকে। এ ধারা যদি অন্তত দশ বছর অব্যাহত থাকত, তাহলে বাংলাদেশ সহজেই উন্নয়নশীল দেশের কাতারে গিয়ে দাঁড়াত। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকদের আচমকা আক্রমণে পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট বাংলাদেশের হৃদয় গুলিবিদ্ধ হয়।

তবে শারীরিকভাবে বিচ্ছিন্ন করা গেলেও তিনি রয়ে গেছেন আমাদের নিশ্বাসে-প্রশ্বাসে। তাই তো তার দেখানো পথেই আজকের বাংলাদেশ শত প্রতিকূলতা মাড়িয়ে হেঁটে চলেছে সমৃদ্ধির পথে। তিনিই যে আমাদের বড় সামাজিক পুঁজি। তার দেওয়া লড়াকু মন নিয়েই বাঙালি চালিয়ে যাচ্ছে অর্থনৈতিক মুক্তির লড়াই।

এ লড়াইয়ে তিনি আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। কেননা, ‘তার রক্তে এই মাটি উর্বর হয়েছে,/সবচেয়ে রূপবান দীর্ঘাঙ্গ পুরুষ:/তার ছায়া দীর্ঘ হতে-হতে/মানচিত্র ঢেকে দ্যায় সস্নেহে, আদরে!/তার রক্তে সবকিছু সবুজ হয়েছে।’ (রফিক আজাদ, ‘এই সিঁড়ি’)

ড. আতিউর রহমান : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক; সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক



বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু রয়েছেন আমাদের নিশ্বাসে-প্রশ্বাসে ড. আতিউর রহমান

খবরটি শেয়ার করুন